টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গতকাল ১০ ডিসেম্বর শনিবার পাকহানাদার মুক্ত দিবস আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে পালিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষ্যে গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন, বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দুপুরে এক বর্ণাঢ্য র্যালি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে থেকে শুরু হয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আয়োজিত কমান্ডার আব্দুস সোবহান তুলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান আরজু। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার জহুরুল হক ডিপটি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসূমুর রহমান, যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার এডভোকেট কে এম আব্দুস সালাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ফারুক ও সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের তালুকদার প্রমূখ।
উল্লেখ্য, একাত্তর সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গোপালপুর থানা দখল করে নেয়। শুরু হয় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। সব চেয়ে বড় গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয় হাদিরা ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ুন বাঙ্গাল বাহিনীর বাধা পেয়ে ঐ গ্রামে পৈশাচিকতায় উল্লসিত হয়ে নারকীয় ঘটনা ঘটায়। ৯ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় ভারতীয় তিনটি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর ও ঘাটাইল থানার উপর একযোগে ট্রাম্পিং এবং নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানি গোপালপুরের গরুহাটি এলাকা দিয়ে, আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানী গোপালপুরের দক্ষিণাংশ কীর্তনখোলা দিয়ে, আর আব্দুল হাকিম কোম্পানী বৈরান নদীর ওপাড় অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে মর্টার বাহিনী হিসেবে গোপালপুর থানা আক্রমণ করলে দুই থানার ক্যাম্পে অবস্থিত পাকসেনা ও রাজাকাররা বাঁচার তাগিদে রাতের আধারে গোপালপুর থানা ক্যাম্প থেকে পালাতে থাকে। প্রায় ৮ মাস পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গোপালপুরবাসী হত্যা, ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের পর ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর, শনিবার টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বীরমুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে গোপালপুর থানা দখল করে মুক্তির স্বাদ লাভ করে।
গোপালপুর থানা আক্রমণ ও দখলের যুদ্ধে দুইজন পাক সেনা নিহত ও পনেরো জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পন করে এবং তিনশত জন রাজাকার ধরা পরে। তাদের মধ্যে পচাত্তর জন রাজাকারকে গুলি করে হত্যা করে একটি ইন্দিরায় (কূপে) ফেলে দেয়া হয়। পাক সেনাদের প্রায় আশিটি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। কোম্পানী কমান্ডার নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর শত্রু সেনাদের কাছ থেকে পাওয়া সকল অস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানী কমান্ডারের নিকট থেকে বুঝে নেন। পরে নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুরের নেতৃত্বে গোপালপুর থানায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়।